Thursday, July 31, 2025
Homeটেক নিউজপশ্চিমবঙ্গে ভোটার ভেরিফিকেশন শুরু হচ্ছে | Special Intensive Revision In West Bengal

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার ভেরিফিকেশন শুরু হচ্ছে | Special Intensive Revision In West Bengal

Special Intensive Revision In West Bengal: ভোটারদের জন্য বিপদ! কমিশনের চাওয়া এই ১১টি নথি আপনার কাছে আছে তো?

গত কয়েকদিন ধরে বিহারে ভোটার তালিকা নিয়ে প্রবল আলোড়ন পড়ে গেছে। ভোটের আগে ভোটার তালিকা থেকে হঠাৎ করে লক্ষ লক্ষ নাম মুছে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

বহু মানুষ জানতে পারছেন, তাঁরা আর ভোটারই নন! অথচ বছরের পর বছর ধরে তাঁরা ভোট দিয়ে এসেছেন।

এই ঘটনার রেশ এখন পশ্চিমবঙ্গেও টের পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের এক সূত্র বলছে, বাংলাতেও এই বিশেষ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে অগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে।

Special Intensive Revision In West Bengal

কেন শুরু হল এই ঝামেলা?

২০২৪ সালের জুন মাসে বিহারে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে, ভোটার তালিকায় শুধুমাত্র ‘যোগ্য’ নাগরিকদের নাম রাখা হবে। তার জন্য নথি চাওয়া হচ্ছে।

কিন্তু সমস্যাটা ঠিক এখানেই। যে ১১টি নথি নির্বাচন কমিশন চেয়েছে, তার মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে যেগুলো সহজে থাকে— যেমন আধার কার্ড, রেশন কার্ড, বা প্যান কার্ড— সেগুলোর একটাকেও মানা হচ্ছে না।

বরং চাইছে এমন কিছু কাগজপত্র যা বহু মানুষের কাছেই নেই।

চাওয়া কাগজপত্রের লিস্ট (Special Intensive Revision Documents Required) :

1) সরকারি চাকরিজীবী বা পেনশনপ্রাপক পরিচয়পত্র

– কেন্দ্রীয়/রাজ্য সরকার বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মী হলে দেওয়া ID, অথবা পেনশন পেমেন্ট অর্ডার।

2) সরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা জারি করা পরিচয়পত্র

– ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, এলআইসি, বা অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কর্তৃক ১ জুলাই ১৯৮৭-এর পরে জারি নথি।

3) জন্মের শংসাপত্র

– স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু করা জন্ম নিবন্ধনের কাগজ।

4) পাসপোর্ট

– বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট।

5) শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র

– স্বীকৃত বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত ম্যাট্রিকুলেশন বা অন্যান্য শিক্ষাগত সার্টিফিকেট।

6) স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণপত্র

– রাজ্য সরকারের কর্তৃপক্ষ দ্বারা জারি করা স্থায়ী বসবাসের শংসাপত্র।

7) বন অধিকারের শংসাপত্র

– বনভূমি বা অরণ্য অধিকারের সরকারি স্বীকৃত নথি।

8) জাতিগত শংসাপত্র

– তপশিলি জাতি/উপজাতি, ওবিসি বা অনগ্রসর শ্রেণির শংসাপত্র।

9) জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC)-এর অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত নথি

– যদি প্রযোজ্য হয়, নাগরিকত্ব রেজিস্টারে নাম থাকলে তার প্রমাণ।

10) পারিবারিক রেজিস্টার

– স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা গ্রাম পঞ্চায়েত দ্বারা প্রস্তুত পারিবারিক রেজিস্টার কপি।

11) জমি বা বাড়ির সরকারি বরাদ্দ সংক্রান্ত নথি

– সরকারি প্রকল্প বা দপ্তর থেকে জমি বা ঘরের বরাদ্দের সার্টিফিকেট।

কে বাদ, কে থাকবে, সেটাই বড় প্রশ্ন

কমিশনের দাবি, এর মাধ্যমে মৃত ভোটার, অন্যত্র চলে যাওয়া লোকজন বা অবৈধ নাম সরানো যাবে। কিন্তু বিরোধীদের মতে, এটা করে আসলে গরিব, সংখ্যালঘু, দলিত, ও প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। কারণ এসব শ্রেণির মানুষের অনেকের কাছেই সরকারি কাগজ থাকে না।

একজন বৃদ্ধা বলছিলেন, “আমি গত চল্লিশ বছর ধরে ভোট দিচ্ছি। এখন শুনছি, নতুন করে নাগরিকত্ব প্রমাণ দিতে হবে! এটা কি সহজ কথা?”

আরও পড়ুন:- বাংলায় আবার দুয়ারে সরকার ক্যাম্প শুরু হচ্ছে, তারিখ দেখুন

সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে বিষয়টা

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠন এই নিয়মের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে। ১০ জুলাই আদালত পরামর্শ দেয়, আধার বা রেশন কার্ডকেও প্রমাণপত্র হিসাবে ধরা হোক। কিন্তু কমিশন তাতে রাজি হয়নি। তারা বলছে, এগুলো নাগরিকত্বের যথার্থ প্রমাণ নয়।

এখন ২৮ জুলাই পরবর্তী শুনানি। তখনই জানা যাবে, আদালত কী সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলার কী হবে?

পশ্চিমবঙ্গে এই প্রক্রিয়া শেষবার হয়েছিল ২০০২ সালে। তাই কমিশনের বক্তব্য, সেই তালিকাটাকেই ধরে এগোবে। তবে বাংলার প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, সব প্রস্তুতি তৈরি, কেবল ঘোষণার অপেক্ষা। আদালত যদি বিহারের প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ না দেয়, তবে এখানেও তালিকা সংশোধন শুরু হয়ে যাবে।

সাধারণ মানুষের কষ্টের গল্প

গ্রামে বা মফস্বলে অনেকেই এখনও আধার-রেশন ছাড়া আর কোনও সরকারি নথি পাননি। কারো জন্মের শংসাপত্র নেই, কারো পাসপোর্ট নেই, কেউ আবার কোনও সরকারি চাকরি বা পেনশন পান না।

এসব মানুষ ভোট দেন বহু বছর ধরে, কিন্তু এখন তাঁদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার ভয়! এটা শুধু একটা কাগজপত্রের বিষয় নয়, এটা একধরনের অস্তিত্বের প্রশ্ন।

কী বলছে সাধারণ মানুষ?

চাঁদপুরের মনোরঞ্জনবাবু বললেন, “আমার ছেলের জন্মের সার্টিফিকেট নেই। ও তো ২০০৪ সালে জন্মেছে, ভোটার হয়নি এখনও। এখন শুনছি, আমারই নাম নাকি বাদ যাবে!”

দক্ষিণ দিনাজপুরের ফাতিমা বেগম বলেন, “প্যান কার্ড আছে, আধার আছে, রেশন কার্ড আছে— এতেই তো সরকার সব সুবিধা দেয়। এখন হঠাৎ কেন চলবে না?”

সবশেষে:

এটা শুধু ভোটার তালিকার সমস্যা নয়, এটা নাগরিক পরিচয়ের প্রশ্ন। যাদের কণ্ঠ এতদিন নির্বাচন ঘিরে শোনা যেত, তাঁরা যদি আজ বাদ পড়ে যান, তবে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড়াবে? বিহারের মতো যদি বাংলাতেও এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, তবে বহু পরিবার নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়বে।

এখন সবার দৃষ্টি সুপ্রিম কোর্টের দিকে। সেই রায়ই ঠিক করবে বাংলায় আসন্ন ভোট কেমন হবে।

আরও পড়ুন:- 2002 voter list download west bengal| ২০০২ সালের ভোটার লিস্ট ডাউনলোড

আরও পড়ুন:- কৃষকবন্ধু প্রকল্পের টাকা কবে দিবে? Krishak Bandhu Taka Kobe Dibe 2025

সমস্ত খবরের আপডেট সবার আগে পাওয়ার জন্য আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে আপনারা যুক্ত হয়ে যান নিচের লিংকে ক্লিক করে

Most Popular